চট্টগ্রাম ব্যুরো: চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা মোসলেম উদ্দিন আহমেদ। বর্ষীয়ান এ রাজনীতিবিদ নানা আন্দোলন-সংগ্রাম থেকে মুক্তিযুদ্ধ সংগঠিত করেছিলেন। প্রবীণ এ নেতার মৃত্যুতে শোকের ছায়া নেমে এসেছে পুরো চট্টগ্রামজুড়ে। শোকে স্তব্ধ হয়ে পড়েছেন তাঁর রাজনৈতিক সতীর্থ আর শিষ্যরাও।
সোমবার (৬ ফেব্রুয়ারি) রাত ১২টা ৪৭ মিনিটে রাজধানীর এভারকেয়ার হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন তিনি।
বাদলের পর মোছলেম উদ্দিন আহমদ যে কালুরঘাট সেতু নির্মাণে এমপি হিসেবে দৌঁড়ঝাপ শুরু করেছিলেন কখনো প্রধানমন্ত্রীর দপ্তরে, কখনোবা রেল কিংবা সেতু মন্ত্রীর দপ্তরে। শেষমেশ স্বপ্নের কালুরঘাট সেতুর বাস্তবায়ন দেখে যেতে না পারলেও দেখেছেন সংস্কার কাজের তড়িঘড়ি।
তার মৃত্যুতে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য ও সাবেক মন্ত্রী ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেন এমপি শোক জানিয়ে বলেন, চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা মোসলেম উদ্দিন আহমেদ এমপি'র মৃত্যুতে চট্টগ্রামের মানুষ তাদের একজন অভিভাবককে হারিয়েছে।
মহান মুক্তিযুদ্ধে মোছলেম উদ্দীনের অনন্য অবদানের কথা এবং দলের জন্য নিরাপোষ ভূমিকার কথা স্মরণ করে তিনি বলেন, তাঁর মৃত্যুতে দেশ ও দলের বিশেষ করে চট্টগ্রামের যে অপূরণীয় ক্ষতি হয়েছে তা কখনও পূরণ হবার নয়। তাঁর মৃত্যুতে আমি আমার দীর্ঘদিনের সুখ-দুঃখের এক রাজনৈতিক সহকর্মীকে হারিয়েছি। তিনি তাঁর বিদেহী আত্মার শান্তি কামনা করেন এবং শোকসন্তপ্ত পরিবারের প্রতি গভীর সমবেদনা প্রকাশ করেন।
প্রয়াতের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে তথ্যমন্ত্রী ড. হাসান মাহমুদ বলেন, আমরা এমন একজন নেতা হারিয়েছি যার সাথে আমাদের দীর্ঘ কয়েক দশকের সম্পর্ক। তার জীবন থেকে অনেক শিক্ষণীয় আছে উল্লেখ করে তথ্যমন্ত্রী বলেন, কিভাবে কর্মী থেকে নেতা হওয়া যায়, কর্মীদের সাথে কিভাবে সার্বক্ষণিক থাকা যায় এবং নেত্রী এবং নেতৃত্বের প্রতি কিভাবে অবিচল থাকা যায়, সেটি তার কাছ থেকে শেখার আছে।’
ইতিহাসের দিকে তাকিয়ে সম্প্রচারমন্ত্রী হাছান বলেন, ‘মোসলেম উদ্দিন আহমেদ আমাদের দলের একজন পোড়খাওয়া কর্মী ছিলেন, মুক্তিযুদ্ধের সময় মুক্তিযুদ্ধে গিয়েছিলেন। তিনি এবং এ বি এম মহিউদ্দিন চৌধুরী এক সাথে পাকিস্তানিদের হাতে ধরা পড়েছিলেন ও পরে পাগলের অভিনয় করে মুক্তি লাভ করেন।’
ড. হাছান বলেন, ‘তার জীবন কর্মী থেকে নেতা হওয়ার জীবন। তখন চট্টগ্রাম শহর ছাত্রলীগ ছিলো, মোসলেম উদ্দিন চট্টগ্রাম শহর ছাত্রলীগের সভাপতি ছিলেন, এরপর তিনি যুবলীগের সভাপতি হন। তারপর তাকে দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব দেওয়া হয়। দীর্ঘ দুই দশক তিনি সেই দায়িত্ব পালন করেন এবং শেষে এক দশকের বেশি সময় তিনি সভাপতির দায়িত্ব পালন করেছেন।’
শোকবার্তায় ভূমিমন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরী মরহুমের রুহের মাগফেরাত কামনা করেন এবং তাঁর শোকসন্তপ্ত পরিবারের সদস্যদের প্রতি গভীর সমবেদনা জ্ঞাপন করেন।
ভূমিমন্ত্রী বলেন, জাতীয় মুক্তির জন্য ঐতিহাসিক সংগ্রামে সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণকারী দেশের কৃতী সন্তান বীর মুক্তিযোদ্ধা মোছলেম উদ্দীন আহমদ তাঁর মেধা ও দক্ষতা দিয়ে একাধারে যেমন দেশের সেবা করে গিয়েছেন, অন্যদিকে তাঁর বর্ণাঢ্য কর্মজীবনের বিভিন্ন পর্যায়ে চট্টগ্রামের সমাজ উন্নয়ন, জনসেবা, এবং গণতন্ত্র রক্ষার সংগ্রামে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখেছেন।
বীর মুক্তিযোদ্ধা মোছলেম উদ্দিন আহমদের মৃত্যুতে শোক জানিয়ে শিক্ষা উপমন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল বলেন, ‘মোছলেম উদ্দিন আহমেদ, আমার বাবা এবিএম মহিউদ্দিন চৌধুরী এবং মোহাম্মদ ইউনুস মুক্তিযুদ্ধের সূচনালগ্নে একসঙ্গে গ্রেফতার হয়ে কারাগারে নির্যাতন সহ্য করেছেন। সেখান থেকে পালিয়ে গিয়ে তারা মুক্তিযুদ্ধে অংশ নেন। তিনি মাঠে, ময়দানে, রাজপথে, আওয়ামী লীগকে সংগঠিত করতে সংগ্রামী ভুমিকা রেখেছেন। কয়েকদিন আগেও জননেত্রী শেখ হাসিনার চট্টগ্রামের জনসভা সফল করতে তিনি চিকিৎসা-বিশ্রাম বাদ দিয়ে রাতদিন পরিশ্রম করেছেন। এতে তিনি বেশ ক্লান্ত হয় পড়েন, কিন্তু আওয়ামী লীগের সম্মেলনে অসুস্থ শরীর নিয়েও উপস্থিত ছিলেন। তার মৃত্যুতে জাতি একজন নিবেদিতপ্রাণ রাজনীতিবিদ হারালো। এই ক্ষতি অপূরণীয়।’
প্রয়াত এ নেতার কথা স্মরণ করে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের ত্রাণ ও সমাজ কল্যাণ সম্পাদক আমিনুল ইসলাম আমিন নিউজনাউকে বলেন, কালুরঘাট সেতু নিয়ে এত দৌঁড়ঝাপ করেও শেষবারের মতো তিনি এই সেতু দেখে যেতে পারলেন না। আমরা আমাদের একজন অভিভাবককে হারালাম। তাঁর শূন্যতা কখনই পূরণ হওয়ার নয়। বর্ষীয়ান এ নেতার বিদেহী আত্মার শান্তি ও মাগফেরাত কামনা করছি।
শোক জানিয়ে চট্টগ্রাম মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সাবেক মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দিন বলেন, চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও চট্টগ্রাম -০৮ আসনের মাননীয় সাংসদ বীর মুক্তিযোদ্ধা মোছলেম উদ্দিন আহমদের মৃত্যুতে আমি শোকাহত। আমি মরহুমের আত্মার মাগফেরাত কামনা করি ও শোক সন্তপ্ত পরিবারের প্রতি সমবেদনা জানাই।
এছাড়াও তাঁর মৃত্যুতে শোক জানিয়েছেন চট্টগ্রাম মহানগর আওয়ামী লীগ ভারপ্রাপ্ত সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা মাহতাব উদ্দিন চৌধুরী, চট্টগ্রাম উত্তর জেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি এম এ সালাম ও সাধারণ সম্পাদক আতাউর রহমান, চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মফিজুর রহমান।
মঙ্গলবার (৭ ফেব্রুয়ারি) সকাল ১১টায় নগরীর জমিয়তুল ফালাহ জামে মসজিদ প্রাঙ্গণে তৃতীয় জানাজা শেষে গরীবউল্লাহ শাহ মাজারে মায়ের কবরের পাশে তাকে দাফন করা হবে।
নিউজনাউ/আরএইচআর/২০২৩