নিউজনাউ ডেস্কঃ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক উপদেষ্টা ও বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ অধ্যাপক আকবর আলী খান আর নেই।
বৃহস্পতিবার (৮ সেপ্টেম্বর) রাতে রাজধানীর এভারকেয়ার হাসপাতালে নেওয়া হলে তাকে মৃত ঘোষণা করেন চিকিৎসকরা। মৃত্যুকালে তাঁর বয়স হয়েছিল ৭৮ বছর।
বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন আকবর আলী খানের ভাই কবির উদ্দীন খান।
আকবর আলী খান বাংলাদেশের সরকারি আমলা, অর্থনীতিবিদ এবং শিক্ষাবিদ ছিলেন। মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে তিনি হবিগঞ্জের মহুকুমা প্রশাসক বা এসডিও ছিলেন এবং যুদ্ধকালীন সময়ে সক্রিয়ভাবে মুজিবনগর সরকারের সাথে কাজ করেন। মুক্তিযুদ্ধ কালে পাকিস্তান সরকার তার অনুপস্থিতিতে তার বিচার করে এবং ১৪ বৎসরের সশ্রম কারাদণ্ডে দণ্ডিত করে।
১৯৭১-এর ১৬ই ডিসেম্বরে স্বাধীন বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠার পর দেশে প্রত্যাবর্তন করেন এবং সচিবালয়ে সংস্থাপন মন্ত্রণালয়ে যোগ দেন। তিনি সেখানে ছয় মাস চাকরি করেন এবং মুক্তিযোদ্ধা ও পাকিস্তান থেকে ফেরত ব্যক্তিদের চাকরি পেতে সহায়তা করেন। পরে তাকে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে সরিয়ে নেয়া হয়। ১৯৭৩ সালে তিনি চাকরি ছেড়ে শিক্ষকতায় যোগদানের জন্য সিদ্ধান্ত নেন। তিনি তার পদত্যাগপত্র জমা দিলেও বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান তা গ্রহণে অস্বীকৃতি জানান। তাকে অবসর না দিয়ে শিক্ষকতা করার জন্য ছুটি দেয়া হয়। সেসময় তিনি কমনওয়েলথ বৃত্তির জন্য মনোনীত হয়ে তিনি কানাডার কুইন্স বিশ্ববিদ্যালয়ে যোগ দেন এবং সেখানে অর্থনীতি বিভাগে মাস্টার্স এবং পি. এইচ. ডি. ডিগ্রি অর্জন করেন।
১৯৭৯ সালে দেশে ফেরত আসার পরে অল্প সময়ের মধ্যেই তিনি জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের সহকারী অধ্যাপক পদে পদোন্নতি লাভ করেন। তাকে আবারো প্রশাসনের মন্ত্রিপরিষদ বিভাগে যোগ দেবার জন্য আহ্বান জানানো হয়। ১৯৮৪ সালে তিনি সাভারের বিপিএটিসি-তে মেম্বার ডাইরেক্টিং স্টাফ (এমডিএস) হিসেবে যোগ দেন। অত:পর ১৯৮৭ সালের পূর্ব পর্যন্ত তিনি পল্লী উন্নয়ন বোর্ড, পানি সম্পদ মন্ত্রণালয় এবং বাংলাদেশ সরকারী কর্মকমিশন সচিবালয়ে কাজ করেন।
তিনি ওয়াশিংটনের বাংলাদেশ দূতাবাসে মিনিস্টার (ইকনমিক) পদে যোগ দেন। ঢাকায় ফিরে তিনি অর্থ মন্ত্রণালয়ের ব্যাংকিং বিভাগে অতিরিক্ত সচিব পদে যোগ দেন। তার সময়ে তিনি বিসিসিএল ব্যাংকের পুনর্গঠন এবং বেসিক ব্যাংক অধিগ্রহণের কাজ করেন। অল্প সময়ের জন্য পরিবেশ ও বন মন্ত্রণালয়ে কাজ করে তিনি ১৯৯৩ এ সরকারের সচিব হিসাবে পদোন্নতি লাভ করেন। ১৯৯৩ থেকে ১৯৯৬ পর্যন্ত তিনি জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের চেয়ারম্যান হিসাবে দায়িত্ব পালন করেন। ১৯৯৬ সালে তিনি অর্থ সচিব হিসাবে পদস্থ হন। ২০০১ সালে তিনি বিশ্বব্যাংকে বাংলাদেশের প্রতিনিধি হিসাবে বিকল্প কার্যনির্বাহী পরিচালক (অল্টারনেটিভ এক্সিকিউটিভ ডাইরেক্টর) পদে যোগদান করেন। বিশ্ব ব্যাংকে তিনি ২০০২ সাল থেকে ২০০৫ সাল পর্যন্ত কাজ করেন।
২০০৬ সালে তিনি রাষ্ট্রপতি ইয়াজউদ্দিন আহম্মেদের নেতৃত্বাধীন তত্ত্বাবধায়ক সরকারের একজন উপদেষ্টা ছিলেন। পরবর্তীতে সুষ্ঠু নির্বাচন সম্পন্ন না হবার আশঙ্কায় তিনি তিনজন উপদেষ্টার সাথে একযোগে পদত্যাগ করেন। এছাড়াও তিনি রেগুলেটরি রিফর্মস কমিশনের চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পালন করেছেন।
নিউজনাউ/পিপিএন/২০২২