রংপুর ব্যুরো: রংপুরের গঙ্গাচড়ায় ৯৭ বস্তা নকল দানাদার কীটনাশক উদ্ধার হলেও প্রশাসন কোন পদক্ষেপ নেয়নি। পাথরের গুড়ায় রং মিশিয়ে তৈরি করা এসব দানাদার কীটনাশক গত ১০ দিন ধরে পড়ে আছে গজঘন্টা ইউনয়ন পরিষদে। স্থানীরা অভিযোগ করেন, কয়েকজন অসাধু সার ব্যবসায়ী নকল সার-কীটনাশক তৈরিসহ বাজারজাত করে কৃষকদের সর্বনাশ করছে। নাম, ঠিকানা পাওয়ার পরও প্রশাসন তাদের বিরুদ্ধে এখনও কোন ব্যবস্থা নেয়নি। অনেক টাকায় বিষয়টি দফারফা হয়েছে বলে অভিযোগ করেন তারা। তবে উপজেলা নির্বাহী অফিসার জানান, নকল সার-কীটনাশক প্রস্তুতকারীদের কোনভাবেই ছাড় দেওয়া হবেনা।
রংপুর অঞ্চলে চলছে রবি ফসল চাষের প্রস্তুতি। আলু, গম, সরিষাসহ শাকসবজি ও বোরো চাষে ব্যাপক সার-কীটনাশকের প্রয়োজন পড়ে। বিশেষ করে রবি মৌসুমে এখানকার অর্থকরী ফসল আলু চাষে বিভিন্ন সারের পাশাপাশি কীটনাশক ও ছত্রাকনাশকের ব্যাপক চাহিদা রয়েছে। আর এই সুযোগকে কাজে লাগিয়ে অসাধু সার ব্যবসায়ীদের একটি চক্র তাদের বাড়িতেই নকল সার-কীটনাশক তৈরি করে বাজারজাত করছে।
গজঘন্টা ইউপি চেয়ারম্যান লিয়াকত আলী জানান, গত ১৫ অক্টোবর গভীর রাতে তিনি খবর পান জয়দেব বাবুপাড়া এলাকায় ট্রলিসহ ৯৭ বস্তা নকল সার আটক করেছেন স্থানীরা। তখন তিনি গ্রামপুলিশ পাঠিয়ে সেগুলো তার ইউনিয়ন পরিষদে নিয়ে আসেন। দুদিন পর তিনি বিষয়টি উপজেলা নির্বাহী অফিসারকে লিখিতভাবে অবগত করেন। কোনো লেবেল ছাড়াই এসব বস্তার ভেতর রং মেশানো পাথরের দানা রয়েছে উল্লেখ করে চেয়ারম্যান জানান, এই অপকর্মের সঙ্গে রংপুর সিটি করপোরেশনের ৭ নম্বর ওয়ার্ডের বাসিন্দা সার ব্যবসায়ী আকমল হোসেন (গজঘন্টা বাজারে তার ‘মেসার্স আকমল কৃষি ঘর’ নামে ব্যবসা প্রতিষ্ঠান রয়েছে) ও গঙ্গাচড়ার জয়দেব বাবুপাড়া এলাকার মাহাতাব আলী জড়িত আছে বলে শোনা যায়।
সরেজমিনে গজঘন্টা ইউনিয়ন পরিষদে গিয়ে দেখা যায়, উদ্ধারকৃত বস্তাগুলো পড়ে আছে বারান্দায়। বস্তার গায়ে কোন লেবেল নেই। বেশকিছু বস্তা ফেটে বাইরে স্তুপ হয়ে পড়ে আছে পণ্যগুলো। যা দেখে মনে হয় পাথরের গুড়ায় (দানাদার) রং মেশানো হয়েছে। উপস্থিত লোকজন জানান, এগুলো হুবহু দানাদার কীটনাশক ফুরাডানের মত। যা এক কেজির মনোরম প্যাকেটে ভরিয়ে চড়াদামে বিক্রি করা হয়। উদ্ধারের রাতেই মোটা অঙ্কের টাকায় বিষয়টি দফারফা হয়েছে অভিযোগ করে তারা জানান, এইভাবে নকল সার-কীটনাশক বাজারজাত করে কৃষকদের সর্বনাশ করা হচ্ছে। নাম প্রকাশ না করার শর্তে জয়দেব বাবুপাড়া এলাকার কয়েকজন জানান, মুলত এই ঘটনার নায়ক সার ব্যবসায়ী আকমল হোসেন। মাহাতাব আলীর মাধ্যমে তার বাড়িতে মেশিনে পাথরের গুড়ায় রং মিশিয়ে ট্রলিতে করে বিভিন্ন এলাকায় সরবরাহ করা হয়।
এ ব্যাপারে গঙ্গাচড়া উপজেলা কৃষি অফিসার শরিফুল ইসলাম বলেন, ‘ইউএনও স্যারের মাধ্যমে খবরটি জেনে উদ্ধারকৃত বস্তাগুলো দেখে এসেছি। কিন্তু সেগুলোতে কোন লেবেল নেই। তবে ভেতরে পাথরের গুড়ায় দানাদার কীটনাধকের আদলে রং মিশিয়ে ভরানো হয়েছে বলে মনে হয়।’ উপজেলা নির্বাহী অফিসার এরশাদ উদ্দিন বলেন, কৃষি অফিসারকে তদন্তের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। কৃষকের সঙ্গে প্রতারণা করতে নকল সার-কীটনাশক তৈরি করা হলে কাউকে ছাড় দেওয়া হবেনা।
নিউজনাউ/এসএইচ/২০২২