alo
ঢাকা, শনিবার, মার্চ ২৫, ২০২৩ খ্রিস্টাব্দ | ১১ চৈত্র ১৪২৯ বঙ্গাব্দ

এবার তৃণমূলে মুখোমুখি আ.লীগ-বিএনপি, সারাদেশে উদ্বেগ

প্রকাশিত: ১১ ফেব্রুয়ারী, ২০২৩, ০১:৫৮ পিএম

এবার তৃণমূলে মুখোমুখি আ.লীগ-বিএনপি, সারাদেশে উদ্বেগ
alo

 

নিউজনাউ ডেস্ক: দেশের বড় দুটি রাজনৈতিক দল আওয়ামী লীগ ও বিএনপি। আজ শনিবার বিএনপির পূর্ব ঘোষিত কর্মসূচি অনুযায়ী তারা সারা দেশের ইউনিয়ন পর্যায়ে করছে পদযাত্রা। একই সময়ে ইউনিয়ন পর্যায়ে শান্তি সমাবেশের ঘোষণা দিয়েছে ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগ। এতদিন ধরে দল গুলা বিভাগীয় শহরে পাল্টাপাল্টি কর্মসূচি দিলেও  এবারই তৃণমূলে সেই কর্মসূচি বিস্তৃত করলো।

ফলে, বেড়েছে সংঘাতের শঙ্কা।  রাজনীতিবীদ থেকে শুরু করে বিশ্লেষকরাও বলছেন এমন পাল্টাপাল্টি কর্মসূচি শুভ কিছু বয়ে আনবে না।  রাজনীতির শহুরে উত্তাপ এবার গ্রামগঞ্জে ছড়িয়েছে। শহরের এসব সমান্তরাল কর্মসূচিতে সংঘাত বা সংঘর্ষ না হলেও দুদলের গ্রামীণ জনপদের কর্মসূচি সাংঘর্ষিক হয়ে ওঠতে পারে। এমন আশঙ্কা সাধারণ মানুষের মনেও। সময় যতো গড়াচ্ছে তাদের মনে উৎকণ্ঠাও বাড়ছে পাল্লা দিয়ে।

ইতোমধ্যেই ক্ষমতাসীন দলটিকে পাল্টা কর্মসূচি থেকে সরে আসার আহ্বান জানিয়েছে বিএনপি। এদিকে সম্ভাব্য যে কোনো পরিস্থিতি মোকাবিলায় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর পক্ষ থেকেও জোরদার করা হয়েছে সার্বিক নিরাপত্তা ব্যবস্থা।

ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নেতারা বলছেন, আমরা শান্তি সমাবেশ করব। যদি কেউ গায়ে পড়ে ঝগড়া করে তাহলে জবাব দেওয়া হবে। অন্যদিকে বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতারা বলছেন, আমরা দীর্ঘদিন ধরে দেশব্যাপী শান্তিপূর্ণ কর্মসূচি পালন করে আসছি। এখন পর্যন্ত কোথাও কোনো অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটেনি। তবে সরকারি দলের পক্ষ থেকে কোনো বাধা আসলে তার জবাব দেওয়া হবে। অবশ্য রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, পাল্টাপাল্টি কর্মসূচি হলে সহিংসতাণ্ডসংঘাতের সম্ভাবনা থাকে।

অন্যদিকে বিএনপি নেতারা বলছেন, সরকার পতনের দাবিতে এবার তারা ইউনিয়ন পর্যায়ে পদযাত্রা কর্মসূচি দিয়েছেন। চলমান আন্দোলনের অংশ হিসেবেই আগামী ১১ ফেব্রুয়ারি ইউনিয়ন পর্যায়ে পদযাত্রার কর্মসূচি দিয়েছে বিএনপি। বিএনপি নেতারা বলছেন, গত ২২ আগস্ট থেকে তৃণমূলে ধারাবাহিকভাবে কর্মসূচি পালন করে আসছে বিএনপি। ১২ অক্টোবর থেকে ৩ ডিসেম্বর পর্যন্ত বিভাগীয় গণসমাবেশ করেছে। সর্বশেষ গত ৪ ফেব্রুয়ারি ১০টি সাংগঠনিক বিভাগে একসঙ্গে বিভাগীয় সমাবেশ করেছে বিএনপি।

আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেন, বিএনপি কিছুদিন হলো প্রকাশ্যে মাঠে আসছে, বিশেষ করে ডিসেম্বর থেকে। আমরা সন্ত্রাসের আশঙ্কায় শান্তি সমাবেশ করছি। যতক্ষণ বিএনপি আন্দোলন করবে আমরা শান্তি সমাবেশ করব। আমাদের দল নির্বাচনের প্রস্তুতি নিচ্ছে। আমরা কোনো কর্মসূচি দিলে কেউ বলছে পাল্টাপাল্টি কর্মসূচি। আমরা তো পাল্টাপাল্টি কর্মসূচি করছি না। বিএনপির সঙ্গে আমাদের অতীতের অভিজ্ঞতা আছে, তা সুখকর নয়। ২০১৩, ’১৪ সালে রাজনীতিতে তারা কত নিকৃষ্টতম, নোংরা ভূমিকা পালন করেছে—সেটার প্রমাণ দেশের মানুষ পেয়েছে।

বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেন, ‘বিএনপি শান্তিপূর্ণ কর্মসূচি দিচ্ছে, তারা (আওয়ামী লীগ) পাল্টা কর্মসূচি দিচ্ছে। বিএনপি কর্মসূচি দিচ্ছে, তারা প্রতিবাদ কর্মসূচি দিচ্ছে। বিএনপি কর্মসূচি দিচ্ছে, তারা নাকি শান্তি কর্মসূচি দিচ্ছে। আমরা বলতে চাই, বিএনপির শান্তিপূর্ণ কর্মসূচিকে বাধা দেওয়া চলবে না। লক্ষ্য জনতা রাস্তায় নেমে প্রমাণ করেছে—গুলি করে, হত্যা করে, মিথ্যা মামলা দিয়ে, গায়েবি মামলা দিয়ে গণজোয়ার বন্ধ করা যাবে না।’

তিনি বলেন, ‘যতই পাল্টা কর্মসূচি দেন, শান্তি সমাবেশ দেন—আপনারা জনগণের কাছে হাস্যকর হিসেবে পরিচিতি হয়েছেন। দেশের মানুষ আপনাদের কর্মসূচি দেখে হাসে।’ পাল্টা কর্মসূচি দিয়ে গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের আন্দোলন বন্ধ করা যাবে না বলে হুঁশিয়ারি দেন এই বিএনপি নেতা।

গত ২৮, ৩০ ও ৩১ জানুয়ারি এবং ২ ফেব্রুয়ারি ঢাকায় বিএনপির পদযাত্রা ঘোষণা করলে ওই দিনগুলোতেও কর্মসূচি নিয়ে মাঠে ছিল আওয়ামী লীগ। গত ৪ ফেব্রুয়ারি বিএনপি ঢাকাসহ দেশের ১০টি বড় শহরে সমাবেশ ডাকলে আওয়ামী লীগও পাল্টা শান্তি সমাবেশ করে। কোনো রকম সহিংসতা সংঘাত ছাড়াই এসব কর্মসূচি শেষ হয়েছে।

এবার বিএনপি ১১ ফেব্রুয়ারি সারা দেশে ইউনিয়ন পর্যায়ে পদযাত্রা কর্মসূচি ঘোষণা করেছে। বিএনপির এই কর্মসূচির বিপরীতে আওয়ামী লীগ একই দিনে সারা দেশে ইউনিয়ন পর্যায়ে শান্তি সমাবেশের ডাক দিয়েছে। বড় দুই রাজনৈতিক দলের এই কর্মসূচি নিয়ে রাজনৈতিক অঙ্গনে উত্তাপ ছড়িয়ে পড়েছে। আশঙ্কা করা হচ্ছে, এই কর্মসূচির দিনে দুই দলের নেতাকর্মীদের মধ্যে সংঘাত ছড়াতে পারে। 

এদিকে, বিএনপির পাশাপাশি সমমনা রাজনৈতিক দল ও জোটগুলোও এদিন পদযাত্রার এই কর্মসূচি পালন করবে।

তবে আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য সাবেক মন্ত্রী অ্যাডভোকট কামরুল ইসলাম বলেন, ‘আমরা কারো সঙ্গে ঝগড়া করার জন্য সমাবেশ করব না। তবে কেউ গায়ে পড়ে ঝগড়া করলে আমরা বসেও থাকব না। সমুচিত জবাব দেওয়া হবে।’

গণতন্ত্র মঞ্চ শনিবার সকাল সাড়ে ১১টায় জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে থেকে মতিঝিল শাপলা চত্বর পর্যন্ত পদযাত্রা করবে বলে জানান মঞ্চের নেতা ভাসানী অনুসারী পরিষদের আহ্বায়ক শেখ রফিকুল ইসলাম বাবলু। এলডিপির যুগ্ম মহাসচিব সালাহ উদ্দীন রাজ্জাক জানান, দলের ঢাকা মহানগর উত্তর শাখার পদযাত্রা বিকেল সাড়ে ৩টায় রাজধানীর ভাটারার বাঁশতলা ক্যামব্রিয়ান কলেজের সামনে থেকে শুরু হয়ে বাড্ডা লিংক রোড মোড়ে গিয়ে শেষ হবে। ১২ দলীয় জোটের পদযাত্রা আগামীকাল ১২ ফেব্রুয়ারি বিকেল ৩টায় বিজয়নগর থেকে পল্টন মোড় হয়ে জাতীয় প্রেস ক্লাব পর্যন্ত অনুষ্ঠিত হবে বলে জোটের সমন্বয়ক জাতীয় দলের চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট সৈয়দ এহসানুল হুদা জানান।

এদিকে, বিএনপির এই কর্মসূচির বিপরীতে আওয়ামী লীগ এদিন সারা দেশের ইউনিয়ন পর্যায়ে শান্তি সমাবেশ করবে। কর্মসূচিতে ৭৮টি সাংগঠনিক জেলার মধ্যে ৪০টিতে দলটির কেন্দ্রীয় নেতারা উপস্থিত থাকবেন। এর মধ্যে সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য থেকে শুরু করে কার্যনির্বাহী সংসদের সদস্যরা রয়েছেন। আবদুর রাজ্জাক ও শামসুন নাহার চাঁপা টাঙ্গাইলে, ফারুক খান ও সৈয়দ আব্দুল আওয়াল শামীম গোপালগঞ্জে, শাজাহান খান, আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম, ড. আবদুস সোবহান গোলাপ, আনোয়ার হোসেন ও সাহাবুদ্দিন ফরাজী মাদারীপুরে, আবদুর রহমান ফরিদপুরে, এ এইচ এম খায়রুজ্জামান লিটন ও বেগম আখতার জাহান রাজশাহী, সিমিন হোসেন রিমি গাজীপুরে, ড. হাছান মাহমুদ চট্টগ্রাম উত্তরে, সফুরা বেগম রুমি লালমনিরহাটে, এইচ এন আশিকুর রহমান, সুজিত রায় নন্দী ও হোসনে আরা লুৎফা ডালিয়া রংপুরে, ডা. রোকেয়া সুলতানা বগুড়ায়, সাখাওয়াত হোসেন শফিক নওগাঁয়, মেরিনা জাহান সিরাজগঞ্জে, নুরুল ইসলাম ঠান্ডু পাবনায়, পারভীন জামান কল্পনা ঝিনাইদহে, বিএম মোজাম্মেল হক যশোরে, নির্মল কুমার চ্যাটার্জি মাগুরায়, মাশরাফি বিন মর্তুজা নড়াইলে, আমীরুল ইসলাম মিলন বাগেরহাটে, সিদ্দিকুর রহমান বরগুনায়, আবুল হাসানাত ও আনিসুর রহমান বরিশালে, গোলাম কবির রাব্বানী চিনু ও তারানা হালিম মানিকগঞ্জ, মৃণাল কান্তি দাস মুন্সীগঞ্জ, সানজিদা খানম নরসিংদীতে, ইকবাল হোসেন অপু শরীয়তপুরে, মির্জা আজম জামালপুরে, মারুফা আক্তার পপি শেরপুরে, অসীম কুমার উকিল ও রেমন্ড আরেং নেত্রকোনায়, নজীবুল্লাহ হিরু ব্রাহ্মণবাড়িয়ায়, আব্দুস সবুর কুমিল্লা উত্তরে, আমিনুল ইসলাম চট্টগ্রাম দক্ষিণে, সিরাজুল মোস্তফা কক্সবাজারে, দীপংকর তালুকদার রাঙামাটিতে, ডা. দীপু মনি ও সেলিম মাহমুদ চাঁদপুরে, আবু সাঈদ আল মাহমুদ স্বপনকে জয়পুরহাটে, এসএম কামাল হোসেন ও গ্লোরিয়া সরকার ঝর্না খুলনায়, আফজাল হোসেনকে পটুয়াখালীতে, ওয়াসিকা আয়শা খানকে বান্দরবানে, ফরিদুন্নাহার লাইলীকে লক্ষ্মীপুরে এবং দেলোয়ার হোসেনকে রাজবাড়ীর শান্তি সমাবেশে উপস্থিত থাকার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।

কর্মসূচিতে নেতাদের অংশগ্রহণ নিয়ে আওয়ামী লীগের দপ্তর সম্পাদক ব্যারিস্টার বিপ্লব বড়ুয়া জানান, আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নেতারা, জেলা, মহানগর ও উপজেলা শাখার নেতারা এবং জনপ্রতিনিধিরা সারা দেশের ইউনিয়ন পর্যায়ে আয়োজিত শান্তি সমাবেশে অংশগ্রহণ করবেন।

বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায় বলেন, ‘তীব্র আন্দোলন শুরু হওয়ার মহড়া চলছে। এতেই সরকারের ভীত নড়বড়ে হয়ে গেছে। এখন আমরা সারা দেশের ইউনিয়ন পর্যায়ে পদযাত্রা কর্মসূচি দিয়েছি। এই কর্মসূচিতে তৃণমূল পর্যায়ের মানুষের সঙ্গে মিশে যাওয়া হবে।’

বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস বুধবার রাতে শাহজাহানপুরে নিজের বাসায় ঢাকা মহানগর দক্ষিণের এক প্রস্তুতি সভায় আওয়ামী লীগকে হুশিয়ারি দিয়ে বলেছেন, পাল্টা কর্মসূচির জবাব কীভাবে দিতে হয় সেটা শিগগির দেখতে পাবেন। তিনি বলেন, ‘শান্তি মিটিংয়ের নামে অশান্তি সভা করবেন না, বিএনপি কর্মসূচি দিলে পাল্টা কর্মসূচি দেবেন না। প্রয়োজন হলে আগে কর্মসূচি দেবেন। আমরা আপনাদের দিনে কর্মসূচি দেব না। যদি শান্তি চান বিএনপির কর্মসূচির দিন কর্মসূচি দিবেন না। অশান্তির জবাব কীভাবে দিতে হয় সেটা শিগগির দেখতে পাবেন।’

বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান শামসুজ্জামান দুদু বলেন, ‘এখন আমাদের চোখ তৃণমূলে। সেখানে ধাপে ধাপে কর্মসূচি পালন করে সাংগঠনিক শক্তি প্রমাণ করতে চাই। জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক নাম প্রকাশ করা হবে না এই শর্তে বলেন, ‘রাজনৈতিক দলগুলোর কর্মসূচিতে এক ধরনের অজানা সংঘাত সহিংসতার আশঙ্কা থাকে। সে ক্ষেত্রে যদি প্রধান প্রধান রাজনৈতিক দল পাল্টাপাল্টি কর্মসূচিতে একই দিনে মাঠে নামে তাহলে তো সংঘাতময় পরিস্থিতিতে সহিংসতা সৃষ্টির শঙ্কা আছেই।’

আইনশৃঙ্খলা বাহিনী জানিয়েছে, সারা দেশে ইউনিয়ন পর্যায়ে বিএনপির পদযাত্রা ও আওয়ামী লীগের শান্তি সমাবেশ ঘিরে কোনো ধরনের বিশৃঙ্খলা বা আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির যাতে অবনতি না হয়, সেজন্য পুলিশ সতর্ক অবস্থানে থাকবে। পুলিশের বিভিন্ন রেঞ্জ ও একাধিক জেলা পুলিশ সুপারের সঙ্গে কথা বলে এই তথ্য জানা গেছে।

পুলিশ সদর দপ্তরের সহকারী পুলিশ মহাপরিদর্শক মো. মনজুর রহমান বলেন, রাজনৈতিক দলগুলো তাদের কর্মসূচি পালন করবে, এটা স্বাভাবিক। তবে কর্মসূচির নামে যদি কেউ আইনশৃঙ্খলার অবনতি ঘটানোর চেষ্টা করে, কোনো ধরনের নাশকতা বা জানমালের ক্ষতির চেষ্টা করে, তাহলে পুলিশ আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেবে। এজন্য সারা দেশেই থানাগুলোয় পুলিশ প্রস্তুত রয়েছে।

নিউজনাউ/আরএইচআর/পিপিএন/২০২৩

X