রিগান ভূঁইয়া: বর্তমান রাষ্ট্রপতি অ্যাডভোকেট আবদুল হামিদের মেয়াদ শেষ হচ্ছে ২৩ এপ্রিল। তিনি পর পর দুই মেয়াদে রাষ্ট্রপতি হয়েছেন। সংবিধান অনুযায়ী তার আর রাষ্ট্রপতি নির্বাচিত হওয়ার সুযোগ নেই।
দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে রাষ্ট্রপতি পদে মনোনয়ন আওয়ামী লীগের জন্য গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। কারণ নির্বাচনের সময়ে রাষ্ট্রপতির গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা থাকে।
কে হচ্ছেন বঙ্গভবনের পরবর্তী বাসিন্দা সেটিই এখন সর্বত্র আলোচনায়। রাষ্ট্রের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ পদে রাজনৈতিকভাবে পোড় খাওয়া ও বিশ্বস্ত কাউকে বেছে নিতে চাইবে আওয়ামী লীগ।
রাজনীতির অন্দরমহলে রাষ্ট্রপতি পদের জন্য বিভিন্ন ব্যক্তির নাম আলোচনায় ছিল। এর মধ্যে শীর্ষে রয়েছে ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেন ও মসিউর রহমান।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে, আগামী সপ্তাহেই রাষ্ট্রপতি পদে আওয়ামী লীগের প্রার্থী চূড়ান্ত হয়ে যেতে পারে। সংসদে আওয়ামী লীগের নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা আছে। ফলে, যিনি আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পাবেন, তিনিই দেশের ২২তম রাষ্ট্রপতি নির্বাচিত হবেন—এটা নিশ্চিত বলা যায়।
আওয়ামী লীগের নীতিনির্ধারণী সূত্র জানিয়েছে, নানা বিচার-বিশ্লেষণ করে আওয়ামী লীগের সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তালিকা ছোট করে নিয়ে এসেছেন। এখন পর্যন্ত ছয়বারের এমপি বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য সাবেক গৃহায়ন ও গণপূর্তমন্ত্রী, বীর মুক্তিযোদ্ধা ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেন ও প্রধানমন্ত্রীর অর্থনীতিবিষয়ক উপদেষ্টা মসিউর রহমান সর্বোচ্চ বিবেচনায় আছেন।
পুরোদস্তুর রাজনীতিক হিসেবে ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেনকে রাষ্ট্রপতি পদে ‘শক্তিশালী’ প্রার্থী বিবেচনা করছেন দলের কেউ কেউ।
দীর্ঘদিন আওয়ামী লীগের রাজনীতির পর তাঁকে রাষ্ট্রপতির সম্মান দেওয়া হতে পারে বলে মনে করছেন দলের নেতাদের কেউ কেউ। গত ২৪ ডিসেম্বর আওয়ামী লীগের যে নতুন কমিটি গঠন করা হয়, তাতে সভাপতিমণ্ডলীতে মোশাররফ হোসেনের নাম সভাপতির পরেই রাখা হয়েছে। এটাকেও কেউ কেউ রাষ্ট্রপতি পদে বিবেচনার ইঙ্গিত মনে করছেন।
এদিকে মসিউর রহমান স্বাধীনতার পর বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ব্যক্তিগত কর্মকর্তা হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছিলেন। ১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় এলে তিনি অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগের সচিব হন। এরপর জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের চেয়ারম্যানসহ নানা দায়িত্ব পালন করেন।
২০০৯ সালে আওয়ামী লীগ দ্বিতীয়বারের মতো সরকার গঠনের পর মসিউর রহমানকে প্রধানমন্ত্রীর অর্থনীতিবিষয়ক উপদেষ্টা নিযুক্ত করা হয়। এর পর থেকেই তিনি এ দায়িত্বে আছেন। তিনি আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদেরও সদস্য। বয়স, দীর্ঘদিন প্রধানমন্ত্রীর কাছাকাছি থাকা এবং অভিজ্ঞতা বিবেচনায় তাঁর সম্ভাবনাও দেখছেন দলের নেতারা।
নির্বাচন কমিশনের (ইসি) তফসিল অনুসারে, দেশের ২২তম রাষ্ট্রপতি নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে ১৯ ফেব্রুয়ারি। তবে আওয়ামী লীগ ছাড়া অন্য কোনো দল রাষ্ট্রপতি পদে প্রার্থী দেবে—এমন কোনো তৎপরতা বা আলোচনা নেই। ফলে, একক প্রার্থী হওয়ার সম্ভাবনাই বেশি। এ পরিস্থিতিতে ১৩ ফেব্রুয়ারি প্রার্থিতা যাচাই-বাছাইয়ের পরই আসলে নিশ্চিত হয়ে যাবে, কে হচ্ছেন বঙ্গভবনের পরবর্তী বাসিন্দা। তখন ভোটের আর প্রয়োজন পড়বে না।
ঘোষিত তফসিল অনুসারে, রাষ্ট্রপতি নির্বাচনে নির্বাচনী কর্তা হিসেবে দায়িত্ব পালন করবেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার কাজী হাবিবুল আউয়াল। ঘোষিত তফসিল অনুযায়ী, আগ্রহী প্রার্থীরা ১২ ফেব্রুয়ারি মনোনয়নপত্র জমা দিতে পারবেন। ১৩ ফেব্রুয়ারি যাচাই-বাছাইয়ের পর ১৪ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত মনোনয়নপত্র প্রত্যাহার করা যাবে। এ নির্বাচনে ভোটার সংসদ সদস্যরা। ভোটার ৩৪৩ জন সংসদ সদস্য।
জাতীয় সংসদে সংরক্ষিত আসনসহ মোট আসন ৩৫০টি। আওয়ামী লীগের মোট আসন ৩০২টি, জাতীয় পার্টির ২৬টি, ওয়ার্কার্স পার্টির ৪টি, জাসদের ২টি, গণফোরামের ২টি, বিকল্পধারার ২টি, তরিকত ফেডারেশনের ১টি ও জেপির ১টি আসন রয়েছে। এ ছাড়া স্বতন্ত্র সংসদ সদস্য রয়েছেন তিনজন।
সংবিধানে বলা হয়েছে, রাষ্ট্রপতি পদের মেয়াদ অবসানের কারণে এ পদ শূন্য হলে মেয়াদ সমাপ্তির তারিখের আগের ৯০ থেকে ৬০ দিনের মধ্যে শূন্য পদ পূরণের জন্য নির্বাচন হবে।
২০১৮ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় দ্বিতীয় দফায় রাষ্ট্রপতি নির্বাচিত হন মো. আবদুল হামিদ। আগামী ২৩ এপ্রিল শেষ হবে তাঁর মেয়াদ। তবে সংবিধান অনুযায়ী, ২৩ ফেব্রুয়ারির মধ্যে নতুন রাষ্ট্রপতি নির্বাচন করতে হবে।
রাষ্ট্রপতির কোনো নির্বাহী ক্ষমতা নেই। তাই অনেকেই পদটিকে ‘আলংকারিক’ হিসেবে আখ্যা দেন। তবে রাজনৈতিক সংকট কিংবা নির্বাচনের সময়ে রাষ্ট্রপতি গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠতে পারেন। সে কারণে আগামী সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে এবার রাষ্ট্রপতি নির্বাচন আলোচনায় গুরুত্ব পাচ্ছে।
নিউজনাউ/আরবি/২০২৩