চট্টগ্রাম ব্যুরো: প্রয়াত সাংসদ মোছলেম উদ্দীন আহমদকে স্মরণ করে শিক্ষা উপমন্ত্রী ব্যারিস্টার মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল তার এক ফেসবুক স্ট্যাটাসে লিখেছেন, ‘তিনি (মোছলেম) কিছুদিন আগেও এক আলাপে আমাকে বলছিলেন, স্বাধীনতা পরবর্তী রাজনীতির ইতিহাসে চট্টগ্রামের অনেক বিষয় বাদ পড়েছে, সেগুলো তিনি লিখে যেতে চেয়েছিলেন।’
সোমবার (৬ ফেব্রুয়ারি) সকালে উপমন্ত্রী তার ব্যক্তিগত ফেসবুক আইডির স্ট্যাটাসে এ কথা লিখেন।
শিক্ষা উপমন্ত্রী লেখেন, ‘বীর মুক্তিযোদ্ধা মোছলেম উদ্দিন আহমদ আমার বাবা এবিএম মহিউদ্দিন চৌধুরী ও বীর মুক্তিযোদ্ধা মোহাম্মদ ইউনুসের সঙ্গে মুক্তিযুদ্ধের প্রারম্ভে গ্রেপ্তার হয়ে কারাগারে নিদারুণ নির্যাতন সহ্য করেছেন। সেখান থেকে পালিয়ে গিয়ে মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করেন।’
‘পরে বঙ্গবন্ধুর নির্দেশে যুবকদের সংগঠিত করতে শেখ ফজলুল হক মনির নির্দেশে যুবলীগের প্রতিষ্ঠাকালীন সংগঠক ছিলেন। তিনি কিছুদিন আগেও এক আলাপে আমাকে বলছিলেন, স্বাধীনতা পরবর্তী রাজনীতির ইতিহাসে চট্টগ্রামের অনেক বিষয় বাদ পড়েছে, সেগুলো তিনি লিখে যেতে চেয়েছিলেন।’—লেখেন তিনি।
তিনি আরও লেখেন, সুদীর্ঘ রাজনৈতিক জীবনে মোছলেম চাচা, বীর মুক্তিযোদ্ধা আখতারুজ্জামান চৌধুরী বাবু, ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেন, এবিএম মহিউদ্দিন চৌধুরী, সুলতান-উল কবির চৌধুরী, আতাউর রহমান কায়সারসহ দীর্ঘদিনের পরীক্ষিত নেতৃবৃন্দের সাথে মাঠে, ময়দানে, রাজপথে, আওয়ামী লীগকে সংগঠিত করতে সংগ্রামী ভূমিকা রেখেছেন।
তিনি তার স্ট্যাটাসে লেখেন, কিছুদিন আগেও বঙ্গবন্ধুর কন্যা জননেত্রী শেখ হাসিনা চট্টগ্রামে জনসভায় আসলে তিনি দিনরাত জনসভাকে সফল করতে নিজের চিকিৎসা, বিশ্রামের কথা বাদ দিয়ে রাজনৈতিক কার্যক্রমে ব্যাপকভাবে সক্রিয় ছিলেন। এতে তিনি বেশ ক্লান্ত হয় পড়েন। কিন্তু বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের কাউন্সিল সম্মেলনে সেই অসুস্থ শরীর নিয়েও উপস্থিত ছিলেন।
ব্যারিস্টার নওফেল লেখেন, মোছলেম উদ্দিনের ইন্তেকালে জাতি একজন নিবেদিতপ্রাণ রাজনীতিবিদ এবং বীর মুক্তিযোদ্ধাকে হারালো। এই ক্ষতি অপূরণীয়। মরহুমের আত্মার মাগফেরাত কামনা করি ও শোকসন্তপ্ত পরিবারের সদস্যদের প্রতি গভীর সমবেদনা জানাই।
এর আগে সোমবার (৬ ফেব্রুয়ারি) রাত ১২টা ৪৭ মিনিটে রাজধানীর এভারকেয়ার হাসপাতালে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও চট্টগ্রাম ৮ আসনের সাংসদ মোছলেম উদ্দিন আহমদ।
জানা গেছে, করোনা মহামারি চলাকালে মোছলেম উদ্দিনের শরীরে ক্যানসার শনাক্ত হয়। সাম্প্রতিক সময়ে তার শারীরিক অবস্থার দ্রুত অবনতি ঘটছিল। পরে তাকে ঢাকার এভারকেয়ার হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। সেখানেই তিনি চিকিৎসাধীন ছিলেন। মোছলেম উদ্দিন আহমদ ১৯৬৯ সালে ছাত্রলীগের সরকারি কমার্স কলেজ, চট্টগ্রাম শাখার সহ সভাপতি হিসেবে নিযুক্ত হন। পরবর্তীতে, তিনি চট্টগ্রাম শাখার সাধারণ সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।
তিনি ১৯৭০ সালে ছাত্রলীগের চট্টগ্রাম শহর শাখার ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেছিলেন। ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধে তিনি অংশগ্রহণ করেছিলেন। বাংলাদেশ স্বাধীন হবার পর তিনি ১৯৮২ সালে ছাত্রলীগের চট্টগ্রাম শাখার সাধারণ সম্পাদক হিসেবে নিযুক্ত হন। তিনি বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা শাখার বর্তমান সভাপতি। ২০২০ সালের ১৩ জানুয়ারি চট্টগ্রাম-৮ আসনের সাংসদ হিসেবে নির্বাচিত হন তিনি।
এদিকে সোমবার সকালে নিউজনাউকে আওয়ামী লীগের ত্রাণ ও সমাজ কল্যাণ সম্পাদক আমিনুল ইসলাম আমিন জানান, আজই হেলিকপ্টারে চট্টগ্রামের বোয়ালখালীতে নিজ গ্রামে নিয়ে আসা হবে তাকে। এরপর বাদ আছর বোয়ালখালী গোমদণ্ডী পাইলট উচ্চ বিদ্যালয়ে তাঁর দ্বিতীয় জানাজা অনুষ্ঠিত হবে।
মঙ্গলবার (৭ ফেব্রুয়ারি) সকাল ১১ টায় চট্টগ্রাম নগরের জমিয়তুল ফালাহ জামে মসজিদ প্রাঙ্গণে তৃতীয় জানাজা শেষে হযরত গরীব উল্লাহ শাহ মাজারে মায়ের কবরের পাশে দাফন করা হবে মোসলেম উদ্দীন আহমদেকে।
নিউজনাউ/আরএইচআর/২০২৩