নিউজনাউ ডেস্ক: দেশে দীর্ঘ পাঁচ বছর পর অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে জেলা পরিষদ নির্বাচন। জেলা পরিষদ নির্বাচন ও গাইবান্ধা-৫ উপনির্বাচনে আওয়ামী লীগের দলীয় প্রার্থী চূড়ান্ত করতে গতকাল শনিবার (১০ সেপ্টেম্বর) বিকেলে প্রধানমন্ত্রীর সরকারি বাসভবন গণভবনে মনোনয়ন বোর্ডের যৌথ সভা অনুষ্ঠিত হয়। সভায় প্রায় অর্ধেক সংখ্যক প্রার্থী পরিবর্তন করে অতীতের ন্যায় এবারও ত্যাগী, যোগ্য, জ্যেষ্ঠ ও দলের জন্য নিবেদিত এমন নেতাদের ওপর আস্থা রেখেছেন আওয়ামী লীগ সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।।
এবার ৬১টি জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান পদের বিপরীতে আওয়ামী লীগের দলীয় মনোনয়ন ফরম সংগ্রহ করেছেন ৫০০ জন। গড়ে প্রতিটি জেলায় আটজনের বেশি মনোনয়নপ্রত্যাশী ফরম সংগ্রহ করেছেন।
তবে আওয়ামী লীগ ঘোষিত চূড়ান্ত তালিকা পর্যালোচনা করে দেখা গেছে— ৬০টি জেলার মধ্যে ২৭টিতেই পরিবর্তন হয়েছে।
জানা যায়, যেসব জেলায় চেয়ারম্যানদের দায়িত্ব পালনের ক্ষেত্রে কোনও অভিযোগ ওঠেনি সেসব জায়গায় প্রার্থী পরিবর্তন আনা হয়নি। এছাড়া অন্যদের পরিবর্তন করা হয়েছে। এর বাইয়ে বয়োবৃদ্ধ হওয়ার কারণেও কয়েকজনকে পরিবর্তন করা হয়েছে।
আওয়ামী লীগের কয়েকজন দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতা জানান, জেলা পরিষদ নির্বাচনে এলাকায় প্রার্থীদের জনপ্রিয়তা আছে, এমন নেতা দেখে মনোনয়ন দিয়েছে দল। এলাকা থেকে আসা বিভিন্ন রিপোর্ট ও জরিপ যাচাই-বাছাই করা হয়েছে। কে বেশি জনপ্রিয়, কাকে দিলে সবাই খুশি হবে, সহজভাবে মেনে নেবে, এসব তথ্য বিবেচনা করেই দলের প্রার্থী চূড়ান্ত করা হয়েছে।
রংপুর বিভাগের পঞ্চগড় জেলা পরিষদে গতবারের আবু বকরের স্থলে এবার আবু তোয়াবুর রহমানকে সমর্থন জানানো হয়েছে। এছাড়া রংপুরে ছাফিয়া খানমের স্থলে ইলিয়াস আহমেদ, গাইবান্ধায় সৈয়দ শামস উল আলম হিরুর পরিবর্তে আবু বকর সিদ্দিককে এবার সমর্থন দিয়েছে দল।
রাজশাহী বিভাগের রাজশাহী জেলা পরিষদে মীর ইকবাল। জয়পুরহাটে আরিফুর রহমান রকেটের স্থলে খাজা শামসুল আলম, চাঁপাইনবাবগঞ্জে মইন উদ্দিন মণ্ডলের স্থলে রুহুল আমিন এবং পাবনায় রেজাউর রহিম লালের পরিবর্তে আ স ম আব্দুর রহিম পাকন দলের সমর্থন পেয়েছেন।
খুলনা বিভাগের মেহেরপুরে মিয়াজান আলীর পরিবর্তে আবদুস সালাম, কুষ্টিয়ায় রবিউল ইসলামের স্থলে সদর উদ্দিন খান, নড়াইলে সৈয়দ আইয়ুব আলীর পরিবর্তে সুবাস চন্দ্র বোস পেয়েছেন আওয়ামী লীগের সমর্থন। তবে সাতক্ষীরা জেলায় দল সমর্থিত কোনও প্রার্থীর নাম ঘোষণা করা হয়নি।
বরিশাল বিভাগের বরগুনা জেলায় গতবারের দেলোয়ার হোসেনের পরিবর্তে এবার জাহাঙ্গীর কবির, পটুয়াখালী জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান পদে গতবার খান মোশাররফ হোসেন সমর্থন পেয়ে নির্বাচিত হন। তার মৃত্যুতে মো. খলিলুর রহমান আওয়ামী লীগের সমর্থন পেয়ে উপনির্বাচনে জয়ী হন। এবারও তিনি দলের সমর্থন পেয়েছেন। বরিশালে মো. মইদুল ইসলামের পরিবর্তে এ কে এম জাহাঙ্গীর, ঝালকাঠিতে সরদার শাহ আলমের পরিবর্তে খান সাইফুল্লাহ পনির, পিরোজপুরে অধ্যক্ষ শাহ আলমের পরিবর্তে সালমা রহমানকে সমর্থন দেওয়া হয়েছে।
ময়মনসিংহ বিভাগের জামালপুরে ফারুক আহম্মেদ চৌধুরীর পরিবর্তে মোহাম্মদ বাকী বিল্লাহ, নেত্রকোনায় প্রশান্ত কুমার পালের পরিবর্তে অজিত কুমার সরকার; ঢাকা বিভাগের গাজীপুরে আখতারুজ্জামানের পরিবর্তে মো. মোতাহার হোসেন, নরসিংদী জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান পদে গতবার আসাদুজ্জামান সমর্থন পেয়ে নির্বাচিত হন। তার মৃত্যুতে আব্দুল মতিন ভুঞা আওয়ামী লীগের সমর্থন পেয়ে উপনির্বাচনে জয়ী হন। এবারও তিনি দলের সমর্থন পেয়েছেন। নারায়ণগঞ্জে আনোয়ার হোসেনের পরিবর্তে চন্দন শীল, রাজবাড়ীতে ফকির আব্দুল জব্বারের স্থলে এ কে এম শফিকুল মোরশেদ, ফরিদপুরে গতবার আওয়ামী লীগের সমর্থনে নির্বাচিত লুৎফর রহমান মৃধা মারা গেলে উপনির্বাচনে আওয়ামী লীগের সমর্থন পেয়ে শামসুল হক ওরফে ভোলা মাস্টার নির্বাচিত হন। তবে এবার তিনি সমর্থন পাননি। তার স্থলে মোহাম্মদ ফারুক হোসেন সমর্থন পেলেন। গোপালগঞ্জে চৌধুরী এমদাদুল হকের পরিবর্তে মুন্সি আতিয়ার রহমান পেয়েছেন আওয়ামী লীগের সমর্থন।
সিলেট বিভাগের সুনামগঞ্জে ইনামুল করিম ইমনের পরিবর্তে খায়রুল কবির রুমেন, সিলেটে লুৎফুর রহমানের স্থলে নাসির উদ্দিন খান।
চট্টগ্রাম বিভাগের ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় আলহাজ শফিকুল আলমের পরিবর্তে আল মামুন সরকার, কুমিল্লায় মো. আবু তাহেরের পরিবর্তে মফিজুর রহমান বাবলু, চাঁদপুরে ওচমান গনি পাটোওয়ারীর পরিবর্তে ইউসুফ গাজী, ফেনী জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান পদে গতবার আজিজ আহমেদ চৌধুরী সমর্থন পেয়ে নির্বাচিত হন। তার মৃত্যুতে খায়রুল বশর তপন আওয়ামী লীগের সমর্থন পেয়ে উপনির্বাচনে জয়ী হন। এবারও তিনি দলের সমর্থন পেয়েছেন। নোয়াখালী এবিএম জাফর উল্ল্যাহর পরিবর্তে আবদুল ওয়াদুদ পিন্টু, লক্ষ্মীপুর জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান পদে গতবার শামসুল ইসলাম সমর্থন পেয়ে নির্বাচিত হন। তার মৃত্যুতে মো. শাহজাহান আওয়ামী লীগের সমর্থন পেয়ে উপনির্বাচনে জয়ী হন। এবারও তিনি দলের সমর্থন পেয়েছেন। চট্টগ্রামে এম এ সালামের পরিবর্তে এ টি এম পেয়ারুল ইসলামকে আওয়ামী লীগ সমর্থন দিয়েছে।
রংপুর বিভাগের ঠাকুরগাঁওয়ে সাদেক কোরাইশী, দিনাজপুরে আজিজুল ইমাম চৌধুরী, নীলফামারীতে মমতাজুল হক, লালমনিরহাট মতিয়ার রহমান, কুড়িগ্রাম মো. জাফর আলী; রাজশাহী বিভাগের বগুড়ায় মকবুল হোসেন, চাঁপাইনবাবগঞ্জে নওগাঁয় এ কে এম ফজলে রাব্বি, রাজশাহীতে বীর মুক্তিযোদ্ধা মীর ইকবাল, নাটোরে সাজেদুর রহমান খাঁন, সিরাজগঞ্জে আব্দুল লতিফ বিশ্বাস; খুলনা বিভাগের চুয়াডাঙ্গায় মাহফুজুর রহমান মঞ্জু, ঝিনাইদহে কনক কান্তি দাস, মাগুরায় পঙ্কজ কুন্ডু, বাগেরহাটে শেখ কামরুজ্জামান টুকু, খুলনায় শেখ হারুনুর রশীদ গতবারের মত এবারও দলের সমর্থন পেয়েছেন। গত নির্বাচনে যশোরে আওয়ামী লীগের সমর্থনে বিজয়ী চেয়ারম্যান শাহ হাদিউজ্জামান মারা গেলে তার শূন্য পদে সাইফজ্জামান পিকুল দলের সমর্থনে চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন। এবারও তিনি এ জেলায় আওয়ামী লীগের সমর্থন পেয়েছেন।
বরিশাল জেলার ভোলায় আব্দুল মোমিন টুলু, ঢাকা বিভাগের টাঙ্গাইলে ফজলুর রহমান খান ফারুক, শেরপুরে চন্দন কুমার পাল, মানিকগঞ্জে গোলাম মহীউদ্দিন, মুন্সীগঞ্জে মো. মহিউদ্দিন, ঢাকায় মো. মাহবুবুর রহমান, শরিয়তপুরে ছাবেদুর রহমান খোকা সিকদার, মাদারীপুরে গতবার আওয়ামী লীগের সমর্থনে নির্বাচিত মিয়াজ উদ্দিন খান মারা যাওয়ার পর মুনির চৌধুরী উপনির্বাচনে জয়ী হন। এবারও তিনি দলের সমর্থন পেয়েছেন এ জেলা থেকে। ময়মনসিংহে অধ্যাপক ইউসুফ খান পাঠান ও কিশোরগঞ্জে মো. জিল্লুর রহমান এবারও সমর্থন পেয়েছেন।
গতবার আওয়ামী লীগের সমর্থনে বিজয়ী মৌলভীবাজার জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান আজিজুর রহমান মারা গেলে মিছবাহুর রহমান উপনির্বাচনে জয়ী হন। এ জেলা থেকে এবারও তিনি দলের সমর্থন পেলেন, হবিগঞ্জে মো. মুশফিক হুসেন চৌধুরী। এছাড়া গতবার কক্সবাজার জেলা পরিষদে চেয়ারম্যান পদে মোস্তাক আহমদ চৌধুরী এবারও সমর্থন পেয়েছেন।
এদিকে জেলা পরিষদ নির্বাচন নিয়ে বিএনপি, জাতীয় পার্টি, ইসলামী বা বামদলগুলোর কেন্দ্রীয়ভাবে তেমন কোনো তৎপরতা চোখে পড়ছে না। তবে কয়েকটি জেলায় বিএনপি, জাতীয় পার্টি, জাসদ এবং বাংলাদেশ জাসদের প্রার্থীরা নির্বাচনের প্রস্তুতি নিচ্ছেন। বিভিন্ন মাধ্যমে নিজেদের প্রার্থিতা জানানও দিচ্ছেন তারা।
নির্বাচন কমিশন গত ২৩ আগস্ট পার্বত্য তিন জেলা বাদে দেশের ৬১টি জেলা পরিষদ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করে। আগামী ১৭ অক্টোবর জেলা পরিষদের ভোট অনুষ্ঠিত হবে।
নিউজনাউ/আরবি/২০২২